মোটিভেশনাল স্টোরি

৩ লাফিং বুদ্ধার শিক্ষণীয় ছোট গল্প।

প্রাচীন চায়নাতে লাফিং বুদ্ধ খুবই জনপ্রিয় ছিলেন । সেই লাফিং বুদ্ধা নিয়ে এখনও প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোক গল্প এবং মিথ । আজকের অনুপ্রেরণামূলক গল্পটিও এনশিয়েন্ট চীনের তিন জন লাফিং বুদ্ধ এর গল্প যা বর্তমান চীনে এখনো জনপ্রিয়।
 
একসময় প্রাচীন চায়নাতে তিন জন বৃদ্ধ মংক (ভিক্ষু) থাকতেন। তাদের নাম আজ তেমন কারওই মনে নেই, কারন তারা তাদের নাম কখনো বলতেনও না। তারা তিন জন নিজেদের “ তিন হাসির বুদ্ধ” (লাফিং বুদ্ধ) হিসেবে পরিচিতি  লাভ করেছিলেন। তারা সবসময় এক সাথে চীনের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামে শহরে ঘুরে বেড়াতেন এবং হাসতেন । কোন একটি শহরের উপকন্ঠে বা প্রধান চত্ত্বরে গিয়ে তারা তিন জন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে আস্তে আস্তে হাসতে শুরু করতেন , কিছুক্ষনের মধ্যে ধীরে ধীরে তাদের আসেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে যেতো এবং তাদের হাসি দেখে তারাও নিজেদের হাসি থামিয়ে রাখতে পারতো না। তারা তাদের সম্পূর্ন জীবন সমগ্র চীন জুড়ে মানুষের মাঝে হাসি ছড়িয়ে দিয়েছেন, মানুষকে দেয়া এটাই তাদের একমাত্র শিক্ষা। তাদের হাসতে দেখলে কারো পক্ষে না হেসে থাকা যেত না। তাদের হাসি দেখে মনে হতো জীবনটা হাসির জন্য, এখানে কষ্টের কোন ঠাই নেই। 

shikkhonio_golpo_pic
হাসি নিয়ে শিক্ষনীয় একটি গল্প


এই সন্ন্যাসী তিন জন সমগ্র চায়না জুড়ে ঘুরে জীবনের শেষের দিকে চীনের নর্থ প্রোভিন্সের একটি ছোট গ্রামে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। একদিন গ্রামে খবর এলো সেই তিন জন লাফিং বুদ্ধের মাঝে একজন মারা গেছেন। দূরদুরান্তের অনেক মানুষ তাদের আবাসস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন । গ্রামের মানুষ কখনো তাদের কাঁদতে দেখেনি। তারা আশা করেছিল আজ হয়তো তাদের কাঁদতে দেখা যাবে, কিন্তু গ্রামের মানুষেরা এসে অবাক হয়ে দেখলেন বাকি দুই মংক বরং আরো জোরে জোরে হাসছেন।

মানুষের মাঝে কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের কষ্ট হচ্ছেনা? তার এই প্রথম সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বললেন, তিনি বললেন, কাল রাতেই আমরা ৩ জন একটি বাজি ধরেছিলাম, ৩ জনের মাঝে কে সবার প্রথম এই পাপময় পৃথিবী থেকে চলে গিয়ে সবার আগে পরম আত্মার সাথে এক হয়ে যেতে পারে। যে সবচেয়ে বেশি পবিত্র তারই এই বাজি জেতার কথা। সে জিতে গিয়েছে।

সে গ্রামের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহ সতকারের আগে গসলের পর নতুন কাপড় পড়িয়ে চিতায় দেয়া হয়। কিন্তু লাফিং বুদ্ধা মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন যেন তাকে তার চিতায় পোড়ানোর আগে যেন গোসল এবং নতুন বস্ত্র না দেয়া হয়। কারন তিনি এই পৃথিবীর পাপ এবং ময়লা এতে কখনো লাগতে দেননি।

যখন তাকে চিতায় রেখে আগুন দেয়া হলো , তখন বাকি দুই জন মংক হাসছিলেন। এবং জড়ো হওয়া জনতা তাদের হাসি দেখছিলো। জ্বলন্ত চিতা থেকে ১০০ রং এর আতশবাজি আকাশে ছড়িয়ে পরলো বাকি সবাই সেই হাসতে থাকা দুইজন জ্ঞানীর সাথে যোগ দিলো এবং হাসতে শুরু করলো।

এই পৃথিবীতে নিজেকে সব কষ্ট, কঠীনতা, অশান্তি থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হাসি। পৃথিবীতে বেচে থাকাটা অনেক সুন্দর। আপনার প্রতিবারের হাসি আপনাকে নতুন করে প্রাণবন্ত করে তোলে।