ওজন কমাতে বেশি বেশি খান-best bangla Weight loss tips.
কি? শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠলেন তো?
কোথায় ওজন কমানোর জন্য আপনি না খেয়ে খেয়ে ডায়েটিং করে কঙ্কালসার হওয়ার চেষ্টা করছেন আর এইদিকে আমি বলছি ওজন কমানোর জন্য আপিনাকে বেশি বেশি খেতে??
হ্যা, আপনি ঠিকই দেখেছেন। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে বেশি বেশি। আমরা সাধারণত ওজন কমানোর জন্য যা করি তা হচ্ছে খাওয়া কমিয়ে দেই। না খেয়ে বা প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়ে ডায়েটিং করি এবং আমাদের ব্রেন একটি ভুল ম্যাসেজ পায়। তাই যখনই আমরা ডায়েটিং এর মাঝে একটু ব্রেক নেই বা ডায়েটিং থেকে অতিষ্ঠ হয়ে একটু আউট অফ ট্র্যাক খাওয়া দাওয়া করি তখন আগের তুলনায় অনেক বেশি মোটা হয়ে যাই। কি হয় কিনা এমন বলুন তো?? এর কারন হচ্ছে ব্রেন ভেবে নেয় যে আপনি আবার আপনার শরীরকে ক্ষুধার্ত রেখে তাকে টর্চার করবেন তাই সেই দুর্দিন এর জন্য আপনার শরীর চর্বি জমাতে শুরু করে। তাই আপনি ডাইটিং ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই আগের চেয়ে দ্বিগুণ মোটাতাজা গুলুমুলু হয়ে যান।
এইতো গেল ব্রেনের নিজেস্ব সাইকোলজিক্যাল কারন আর আপনিও হয়তো এতক্ষণে মনে মনে রাগছেন আর ভাবছেন “আরে ভাই, বেশি কথা না বইলা বেশি খাইয়া কেমনে ওজন কমানো যায় সেইটা বলেন”।
আচ্ছা তাহলে আমরা এখন সে কথাতেই যাচ্ছি। আপনাকে আপনার সারাদিনের খাবারের গুলোকে ভেঙ্গে নিতে হবে অনেকগুলো ভাগে সেটা অবশ্যই আমরা সাধারানত যে তিনবার করে খাবার খাই তার চেয়ে বেশি। সেটা পাঁচবার হতে পারে ছয়বার হতে হতে পারে মোটকথা আপনার মস্তিষ্ককে এমন একটি মেসেজ দিতে হবে যে, আপনি আপনার শরীরকে ক্ষুধার্ত রাখবেন না, আপনি আপনার শরীরকে টর্চার করবেন না এবং অভিযোজনের জন্য তার চর্বি জমানোর প্রয়োজন পরবেনা
সে ক্ষেত্রে সকালটা শুরু হতে পারে এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে একটু লেবুর রস এবং একটু মধু মিশিয়ে পান করে। যা আপনাকে সকালে নিজেকে অ্যাক্টিভ ফিল করতে সাহায্য করবে। এবং আপনার অতিরিক্ত চর্বি কাটাতে সহায়তা করবে। এখানে আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে, যে কোন জিনিসের উপকারী গুণ এর পাশাপাশি সামান্য ক্ষতিকারক কিছু ব্যাপারে থেকে থাকে যেমন আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে আপনি অতিরিক্ত মধু পান করা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যাদের গ্যাসের সমস্যা তাদের জন্য লেবুর রসের সাইট্রিক এসিড ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ জিনিশ গুলো মাথায় রাখতে হবে।
এরপর অধাঘন্টা সকালের সকল কাজ সেরে নিন, এই যেমন কাকের ডাক, পাখির ডাক, প্রকৃতির ডাক যা যা শুনতে হয় আরকি। তারপর একটা ফল খেয়ে নিন, কারন এই সময়টাতে আমাদের শরীরে মেটাবলিজম ডাউন হয়ে থাকে। এটা বাড়াতে আমরা সস্তা এবং সহজলভ্য হিসেবে কলা খেতে পারি একটা। আর পাশাপাশি যদি কিছু বাদাম বা অন্যকোন ড্রাইফুড খেয়ে নেই তবে আরো ভাল। আমাদের শরীর সাধারণত ৩ ঘন্টা অন্তর অন্তর খাবারের চাহিদা অনুভব করে।
এরপর হয়তো বাইরে একটু হাটতে যেতে পারেন, হালকা ব্যায়াম করতে পারেন, সেটা যোগব্যায়াম অথবা মেডিটেশনও হতে পারে। অনেক সময় ধরে ব্যায়াম করার দরকার নেই, অল্প সময় ধরেই করুন কিন্তু চেষ্টা করুন প্রতিদিন করতে। একেক দিন একক কিছু করলেন এতে একঘেয়েমি কম আসবে।
এরপর সকালের নাস্তাটা করবেন ৯.৩০ এর মধ্যে। সকালের নাস্তা করবেন খুবই ভারী। একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, “সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে খাও দরিদ্রের মতো আর রাতে খাও ভিক্ষিরির মতো।” তাও এমন ভিখিরি যে আজ ভিক্ষা পেয়েছে সবচেয়ে কম।
আসলে আমদের বেশি খাওয়াতে আমরা মোটা হইনা, মোটা হই অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার কারনে। সকালের নাস্তাটা ভারী হলেও স্বাস্থ্যকর হওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন ওটস মিশ্রিত খাবার খেতে পারেন, লাল আটার রুটি, বাংগালী যেহেতু তাই লাল চালের ভাতও খেতে পারবেন। সকালে নাস্তার সাথে একটা প্রোটিন শেক খেতে পারেন। কারন আমাদের খাদ্যতালিকা সাধারণত আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরন করতে পারেনা। শরীর ওজন অনুযায়ী প্রোটিন নিতে হবে। কেউ যদি সে আনুপাত বের করতে না পারেন। তবে আমাদের জানালে আমরা তা ক্যাল্কুলেট করে দিবো। বা এর উপর আরো একটি আর্টিকেল দিবো।
এরপর ১২.৩০ এর দিকে একটা আপেল খান। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে একম কোন খাবার খান যা থেকে আপনি ফাইবার পাচ্ছেন। এটা খুবই একটি জরুরী উপাদান শরীরের জন্য। এরপর দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিন ২.৩০ এর মধ্যে। লাঞ্চে প্রচুর স্যালেড খেতে হবে, সেটা শসা, খিরাই হতে পারে, গাজর হতে পারে, আর বাসায় একা থাকলে মূলাও হতে পারে। সাথে নিলেন অল্প ভাত বা দুইটা তিনটা পাতলা রুটি। আর সাথে মাছ, বিভিন্ন প্রকারের ডাল।
বিকেল ৫টার পর স্নেকস হিসেবে কিছু একটা খেয়ে নিন। সেটা ফ্রুট হতে পারে, কেক বা বিস্কিট হতে পারে কোন দেশীয় ফল হতে পারে। প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রেনকে ম্যাসেজ দেয়া যে আপনি রেগুলার খাচ্ছেন। রেগুলার সাপ্পলাই চলছে।
এবার রাতে আপনি যত জলদি খেয়ে নিবেন ততই ভালো। ৮টার মধ্যে চেষ্টা করবেন ডিনারটা সেরে ফেলতে। কারন আমাদের হেলথ কন্ডিশানের সরাসরি সম্পর্ক আমাদের রাতের খাবারের অভ্যাস এর সাথে। রাতে আমরা কি খাচ্ছি, কখন খাচ্ছি, কিভাবে খাচ্ছি তার উপর। ডিনারটা করতে হবে খুবই হালকা। আর রাতে ১০টার দিকে এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিবেন। ক্ষুধা বেশি পেলে দুই গ্লাস পান করলেও সমস্যা নেই। তবে চেষ্টা করবেন সেটা চিনি ছাড়া খাওয়ার।
আর সব শেষ যা বলতে চাচ্ছি তা হলো পানি খাবেন পরিমিত পরিমাণ। অনেকেই বলে থাকে প্রচুর পানি পান করার জন্য। আসলে সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়না। দেহের গঠন এবং ওজন অনুযায়ী পরিমিত পানির প্রয়োজন হয়। আমি আমার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ১০-১২ গ্লাস পানি পান করি।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। উপরের মতামত গুলো কোন নিউট্রেশনিস্ট বা ডাক্তারের দেয়া মতামত নয় তবে নিজে যা প্রয়োগ করে ফল পাচ্ছি তা আপনাদের সাথে সাথে শেয়ার করলাম এবং ভাল লাগলে আপনারাও শেয়ার করতে ভুলবেন না। যেকোনো প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
অনেক উপকারী একটি লিখা, খুব ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ।
Pingback: রসুনের উপকারিতা ও আপকারিতা এবং রসুন খাওয়ার নিয়ম। - আগামীর বাংলা