অনলাইনে ড্রাইভিং লাইন্সেস আবেদন এবং নবায়নের নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে বানাতে হয় এবং নবায়ন
যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম হলো যানবাহন। প্রতিদিনই আমাদের কমবেশি মোটরযান ব্যাবহার করতে হয়। কখনো যাত্রী হয়ে আবার কখনো বা চালক হিসেবে। চালক হিসেবে গাড়ি চালাতে হলে একজন দক্ষ ড্রাইভার হওয়া আবশ্যক। আর একজন দক্ষ ড্রাইভারের পরিচায়ক হলো তার ড্রাইভিং লাইসেন্স। সুতরাং ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন গাড়ি চালকের জন্য অপরিহার্য একটি ডকুমেন্টস। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাতিত গাড়ি চালানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স বানাতে হয় এবং কোনো ভুল ত্রুটি হলে তা সংশোধন করার উপায় সম্পর্কে জানবো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। অর্থাৎ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ শেষ হলে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাই এখানে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজনঃ
১. আবেদনকারীর ছবি (সর্বোচ্চ ১৫০ কে.বি)
২. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি / স্ক্যানডকপি।
৪. ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি।
৫. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
অফলাইনে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন পদ্ধতিঃ
১. বিআরটিএ অফিস থেকে কিংবা ওয়েবসাইট হতে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে নিন।
২. ফরমের দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি অর্থাৎ মেডিকেল সার্টিফিকেটের অংশটি কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক পূরণ করে নিন তার স্বাক্ষর সংগ্রহ করুন।
৩. লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য পরিশোধযোগ্য ফি নির্ধারিত ব্যাংকে জমা করুন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন।
৪. উপরোক্ত সকল ডকুমেন্টস পূরনকৃত ফরমের সাথে সংযুক্ত করে বিআরটিএ অফিসে জমা দিন।
৫. বিআরটিএ কর্তৃক দেয়া নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে উপস্থিত হয়ে রিসিপশন বুথ হতে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
৬. এই লাইসেন্সটি ব্যাবহার করে সর্বোচ্চ তিনমাস পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এবং স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন পদ্ধতিঃ
১. যেকোনো ব্রাউজার হতে বিআরটিএ এর সার্ভিস পোর্টালে যান।
২. নিবন্ধনে ক্লিক করে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।
৩. লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন এ ক্লিক করুন।
৪. মেডিকেল সার্টিফিকেট ফরম ডাউনলোড করে কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক পূরণ করিয়ে স্ক্যানড কপি সংগ্রহ করুন।
৫. ব্যাক্তিগত তথ্য, ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার সহ সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর স্ক্যানড কপি আপলোড করুন।
৬. পরীক্ষার তারিখ ও কেন্দ্র যাচাই করে নিন।
৭. পরবর্তী ধাপে ক্লিক করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
৮. নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সকল তথ্য সাবমিট করে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড করে নিন।
৯. নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল ডকুমেন্টস নিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
সাধারনত লার্নার বা শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহন করার পর সেই লাইসেন্সেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও স্হান উল্লেখ করা থাকে। নির্দিষ্ট দিনে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিচের পরীক্ষণ গুলোতে অংশগ্রহণ করতে হয়ঃ-
১. লিখিত পরীক্ষা ( ইহা ২৫-৩০ মিনিটের একটি লিখিত পরীক্ষা যার পাশ নাম্বার নূন্যতম ৬৬℅। পরীক্ষার প্রশ্নে মূলত ড্রাইভিং ও গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে)
২. মৌখিক পরীক্ষা ( সাধারণত রাস্তায় ব্যাবহৃত বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়)
৩. ব্যাবহারিক পরীক্ষা ( জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে মোটরযান চালিয়ে দেখাতে হয়। গাড়ি পার্কিং করা, জিগজ্যাগ লাইনে ও নির্দিষ্ট লাইনে গাড়ি চালানো সহ বিভিন্ন ড্রাইভিং দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয়)
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদনঃ
মোটরযান চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইহাই আসলে মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স যা স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নামে পরিচিত। এই লাইসেন্স এর মাধ্যমে দেশের যেকোনো রাস্তায় পেশাদার বা অপেশাদারভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন।
যেসকল ডকুমেন্টস প্রয়োজনঃ
১. লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূলকপি।
২. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
৩. সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪. রেজিস্টার্ড ডাক্তারের মেডিকেল সার্টিফিকেট।
আবেদন পদ্ধতিঃ
১. বিআরটিএ অফিস বা ওয়েবসাইট হতে নির্দিষ্ট ফরম ডাউনলোড করে নিন।
২. স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করুন।
৩. ফরমটি পূরণ করে উপরোক্ত সকল কাগজপত্র সহ পরীক্ষায় পাশের রেজাল্ট সংযুক্ত করে নিন।
৪. ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন এবং প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ সংগ্রহ করুন।
৫. প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে বায়োমেট্রিক তথ্যাদি নেওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ যাচাই করে নিন।
৬. নির্দিষ্ট দিনে অফিসে উপস্থিত হয়ে টোকেন সংগ্রহ করুন এবং বায়োমেট্রিক তথ্যাদি হিসেবে আপনার ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর প্রদান করুন।
৭. তথ্য প্রদানের পর একটি রশিদ বুঝে নিন যেখানে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার তারিখ লেখা থাকবে।
৮. কখনো কখনো নির্দিষ্ট তারিখের আগে লাইসেন্স তৈরি হয়ে যায় এক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
৯. ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি হওয়ার মেসেজ পেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর নাম্বার ও প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ নিয়ে বিআরটিএ অফিসে যান।
১০. সকল তথ্য প্রদান করে লাইনে দাঁড়িয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স টি সংগ্রহ করে নিন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নঃ
সাধারণত একটি পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এই নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা আর ব্যাবহারযোগ্য থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স টি পুনরায় নবায়ন করার প্রয়োজন পড়ে।
নবায়ন করতে যেসকল ডকুমেন্টস প্রয়োজনঃ
১. জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।
২. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
৩. রেজিস্টার্ড ডাক্তারের মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৪. সদ্য তোলা ছবি।
৫. পুলিশ ক্লিয়ারেন্সি সার্টিফিকেট
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার পদ্ধতিঃ
১. বিআরটিএ অফিস বা ওয়েবসাইট হতে হতে নবায়ন ফরম ডাউনলোড করে নিন।
২. সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নবায়ন ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা করে রশিদ সংগ্রহ করুন।
৩. ব্যাংক রশিদসহ উপরোক্ত সকল ডকুমেন্টস ফরমের সাথে সংযুক্ত করুন।
৪. বিআরটিএ অফিস ফরমটি জমা দিন।
৫. সকল ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে পুনরায় বায়োমেট্রিক তথ্যাদি সাবমিট করতে হবে।
৬. পুনরায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
৭. লাইসেন্স প্রিন্ট হওয়া সম্পন্ন হলে আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
৮. নির্দিষ্ট দিনে বিআরটিএ অফিসে উপস্হিত হয়ে নিয়মানুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।