তথ্য

জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন ও সংশোধন পদ্ধতি

২০০৪ সনের ২৯ নং আইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ সরকার।  জন্ম নিবন্ধন হলো একজন মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রাষ্ট্র একজন মানুষকে জন্মসূত্রে ওই দেশের নাগরিক হওয়ার একটি প্রাথমিক স্বীকৃতি প্রদান করে এবং এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। সরকারি বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন প্রদশর্ন করা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে। যেমন পাসপোর্ট ইস্যু, ভোটার আইডি নিবন্ধন,  বিবাহ বন্ধন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।  জন্ম নিবন্ধন আইনের বিধান অনুসারে কোনো ব্যাক্তি এই বিধি লংঘন করলে অনধিক পাঁচশত টাকা অথবা অনধিক দুইমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে৷

জন্মনিবন্ধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন

 

 

আজকের আর্টিকেলে আমরা কীভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করতে হয় এবং জন্ম নিবন্ধন সনদের সংশোধন পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।

 

 

জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন পদ্ধতিঃ

 

অফলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমরা যেসব জায়গায় যেতে পারি তা হলো ১. ইউনিয়ন পরিষদ ২. পৌরসভা ৩. সিটি কর্পোরেশন অফিস ৪. সিটি কর্পোরেশন অধীনস্থ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস। জেলা ও উপজেলার উপর ভিত্তি করে আমরা উল্লেখিত স্থানগুলোতে যেতে পারি।

 

যেসকল কাগজপত্র দরকারঃ– জন্ম যদি কোনো হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে হয়ে থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান হতে দেয়া বার্থ সার্টিফিকেট/ছাড়পত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সনদপত্র, পিতা মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি, জমির খতিয়ান নম্বর, বিদ্যুৎ মিটার নম্বর, এলাকার জনপ্রতিনিধি যেমন – ওয়ার্ড কমিশনার/ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার/ পৌরসভার চেয়ারম্যান কতৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি ইত্যাদি। 

 

বয়স্ক ও শিশু উভয় বয়সের জন্ম নিবন্ধনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সরকার বিনা অর্থে সারাদেশে জন্ম নিবন্ধন কাজ করার উদ্যেগ নিয়েছে। তবে জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের ঊর্ধে ব্যাক্তিদের জন্য পঞ্চাশ টাকা ফি দিতে হয়। তাছাড়া জেলা,  উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে এই ফি এর তারতম্য ঘটতে পারে।

 

 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদনঃ

 

বর্তমানে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করে আবেদন করার প্রক্রিয়া প্রায় বিলুপ্ত। দেশ এখন ডিজিটাল হচ্ছে তাই দিন দিন সকল ক্ষেত্র কম্পিউটার নির্ভর ও ডিজিটালাইজড হয়ে গিয়েছে। তাই এখন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরন বেশি সুবিধাজনক।

 

নিম্নে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো দেয়া হলো;

 

১. জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার বাংলাদেশ সরকারের নতুন লিংক হচ্ছে- https://bdris.gov.bd/ এই লিংকে প্রবেশ করুন

 

২. প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।

 

৩. নিবন্ধনাধী ব্যাক্তির পরিচয় ও জন্মস্থানের সকল তথ্য প্রদান করুন।

 

৪. নিবন্ধনকারীর পিতা মাতার তথ্য প্রদান করুন।(পিতামাতার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল বা অনলাইন কিনা আগে যাচাই করে নিবেন অন্যথায় সম্ভব নয়)

 

৫. স্হায়ী ও বর্তমান ঠিকানা প্রদান করুন।

 

৬. সফলভাবে সকল তথ্য প্রদানের পর ফরমটি সাবমিট হলে জন্ম নিবেদন আবেদন পত্র প্রিন্ট আউট করে নিন।

 

৭. পরবর্তীতে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একসাথে সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভা / সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিয়ে আসুন।

 

 

 

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন পদ্ধতিঃ

 

যেহেতু জন্ম নিবন্ধন একটি তথ্য নির্ভর পদ্ধতি সেহেতু এক্ষেত্রে ভুলত্রুটির সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাইজ হয়ে থাকে তাহলে খুব সহজে অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধনের ভুল ত্রুটি সংশোধন করতে পারবেন।

 

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ধাপসমূহ নিম্নরূপঃ

 

১. প্রথমে https://bdris.gov.bd/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।

 

২. মেন্যু থেকে “জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন ” সিলেক্ট করুন।

 

৩. নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য বের করুন।

 

৪. নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা বাছাই করে নিন। অর্থাৎ আপনি যে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন তা বাছাই করুন।

 

৫. জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের তথ্য বাছাই করুন৷ অর্থাৎ আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান তা ক্লিক করে সংযোজন করে নিন।

 

৬. সংশোধিত তথ্য ও সংশোধনের কারণ প্রদান করুন।

 

৭. আপনার ঠিকানা প্রদান করুন।

 

৮. অনলাইনে আবেদন পত্র জমা ও প্রমাণপত্র আপলোড করুন।

 

৯. জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করে নিন।

 

১০. প্রিন্ট করা আবেদন পত্রটি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক অফিসে – ইউনিয়ন পরিষদ / পৌরসভা / সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিন।

 

বাংলাদেশ সরকার নীতিমালা অনুযায়ী, জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন কিংবা পুনঃমুদ্রনের জন্য ৪০০-৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। তবে সরকারি ফি যাই থাকুক না কেনো আপনাকে কিছু বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে৷ সংশোধনী আবেদনের তথ্য সংশোধন করতে সাধারণত ৫ থেকে ৭ কর্মদিবস সময় লাগতে পারে।

 

আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদটি ঠিক আছে কিনা বা অনলাইনে এন্ট্রি আছে আছে কিনা তা জানার জন্য নিম্নের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। ( br.lgd.gov.bd)  ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর Birth Verify অপশনে ক্লিক করে আপনার জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের কোড এবং জন্ম তারিখ প্রদান করুন। আপনার জন্ম নিবন্ধন যদি বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট নিবন্ধিত থাকে তাহলে চলে আসবে।