আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক ১০ জন স্বৈরাচার। Top 10 brutal dictators in the modern history.
একসময় মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল বনের পশু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর পরে মানুষ আস্তে আস্তে ক্ষমতাবান হয়ে উঠলো আর তার বড় শত্রু হয়ে উঠলো লোভ আর ক্ষমতা। পৃথিবীতে মানুষের লোভ আর ক্ষমতার অহমিকা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসে। তেমনি লোভ আর লালসার শিকার হয়ে কিছু মানুষ কোটি মানুষের শান্তি বিনষ্ট করেছে। আজকের আর্টিকেল এমন কিছু ক্ষমতাবান লোভী স্বৈরাচারদের নিয়ে। আজকের আর্টিকেলে থাকছে আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর ১০ জন স্বৈরাচারের কথা।
১। হিটলারঃ হিটলার ১৯৩০ সালে জার্মানির ক্ষমতায় বসে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ চালায়। হিটলার ভয়ানক রকমের বর্নবাদী ছিলেন তার বর্ন বিদ্বেষের কারণে ১ কোটিরও বেশী মানুষ মারা যায় যার মধ্যে ৬০ লাখ ছিল ইহুদি। হিটলারের জেদ আর রাগের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় যে যুদ্ধে সারা পৃথিবীর ৫-৭ কোটি মানুষ মারা যায়। হিটলার ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করে মারা যান।
২। জোসেফ স্তালিনঃ সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন নেনিন মারা যাওয়ার পরে ১৯২৪ সালে ক্ষমতায় আসেন। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকা ও ব্রিটেনকে সাহায্য করেন হিটলারকে পরাজিত করতে কিন্তু তিনি নিজের দেশের বিপক্ষ মতবাদের রাজনীতিবিদদের উপর অত্যাচারের রোলার চালান। তার শাসনকালে তিনি প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে হত্যা করেন। অনেক মানুষ তার অত্যাচারে দেশ থেকে পালিয়ে যায়।
৩। পল পটঃ পল পট ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ক্যাম্বোডিয়ার শাসন করেন। এই সময়ে তিনি আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গনহত্যা চালান। তার ৪ বছরের শাসনে ক্যাম্বোডিয়ার প্রায় ১০ লাখ মানুষ শুধুমাত্র না খেয়ে মারা যায়। অনেক মানুষ তার অত্যাচারে দেশ ছাড়া হন।
৪। ইদি আমীনঃ ইনি উগান্ডার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার শাসনামলে প্রায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যায় উগান্ডায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তার শাসনামলে মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। তিনি ক্ষমতার দম্ভে এত অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি তার পাশের দেশ তাঞ্জানিয়া আক্রমন করে বসেন। কিন্তু তাঞ্জানিয়ার কাছে হেরে তিনি প্রাণ বাঁচাতে লিবিয়ায় আশ্রয় নেন। এরপরে তিনি ২০০৩ সালে সৌদি আরবে আশ্রিত অবস্থায় মারা যান।
৫। অগাস্ট পিনোসেটঃ অগাস্ট ১৯৭৩ সালে একটা সামরিক অভ্যুথানের পর চিলির ক্ষমতায় আসেন এবং ২০ বছর ক্ষমতায় অনেক থেকে দুর্নীতি, অত্যাচার ও হত্যাকান্ড চালান সাধারণ জনগনের উপর। তার শাসনের প্রথম ৩ বছরে তিনি প্রায় ১ লাখ মানুষকে গ্রেফতার করেন। ১৯৯০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন এবং চিলির জনগন তাকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে। ২০০০ সালে মানবধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয় কিন্তু তার মানসিক ভারসাম্য নেই বলে তাকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
৬। ফ্রান্সিস ডুভালিয়ারঃ হাইতির স্বৈরশাসক ডুভালিয়ার ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হাইতি শাসন করেন। তার অত্যাচারী শাসনে হাইতির প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। হাইতি এখন প্রচন্ড দরিদ্র একটা দেশ। অনেক মানুষ তাকে দায়ী করে হাইতির এই অবস্থার জন্য।
৭। ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোঃ ফ্রাঙ্কো ছিলেন একজন স্প্যানিশ স্বৈর শাসক। তিনি ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার শাসনামলে তিনি তার বিরোধী মতবাদকে দমন করতে মানুষকে জেল, জরিমানা এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছেন। ১৯৬০-১৯৭০ সালের দিকে তিনি অনেক ভালো শাসন করেছেন কিন্তু স্পেনের মানুষ গনতন্ত্রের সাধ পেয়েছে তার মৃত্যুর পর।
৮। সাদ্দাম হোসেনঃ ১৯৭৯ সালে সাদাম হোসেন একটি সেনা অভ্যুত্থানের মাধুমে ক্ষমতায় আসেন। তার শাসনামলে তিনি ইরানের সাথে প্রায় ১০ বছর যুদ্ধ করেন। এছাড়া নিজের দেশের অনেক মানুষকেও তিনি হত্যা করেন। তিনি কুর্দিস্থানের মানুষের উপর বোমা মেরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ হত্যা করেন।
৯। চার্লস টেলরঃ লাইবেরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলর ১৯৯৭ সালে জোর করে ক্ষমতায় আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি তার শাসনামলে অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, এছাড়া যুদ্ধাপরাধ ও নাগরিক অধিকার ও হনন করেছেন। তার জন্য ১৯৯৯-২০০৩ সাল পর্যন্ত লাইবেরিয়ায় গৃহ যুদ্ধ চলে। তার বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে।
১০। মেনিংস্টু হাইলে মারিয়ামঃ ইথিওপিয়ার এই স্বৈরশাসক তিনি ইথিউপিয়ার রাজ শাসন হটিয়ে ১৯৭৪ সালে নিজের কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার শাসনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ হত্যা করেন। ১৯৯১ সালে তিনি বিদ্রোহের মুখে দেশ ছেড়ে জিম্বাবুয়ে পালিয়ে যান। ২০০৬ সালে গনহত্যার জন্য তার সাজা হয়। তিনি এখন জিম্বাবুয়েতেই আছেন।
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অনেক ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান কিন্তু মানুষ সেগুলো অপ ব্যবহার করে আরেকজন মানুষের ক্ষতি করে। এই সব মানুষের জঘন্য অন্যায় দেখে আমরা সকলে শিক্ষা নেই যে ভালো মানুষের কতটা দরকার আমাদের। আজকে এই পর্যন্তই। সেরা দশে আবারো মজার কিছু নিয়ে হাজির হব সামনে। ধন্যবাদ।