ত্বীন ফল বা আঞ্জিরের উপকারিতা ও তিন ফল খাওয়ার নিয়ম
ত্বীন ফল কি এবং কোথায় চাষ হয়
ত্বীন ফল একটি পুষ্টিকর ফল। তিন ফল ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Fig। ত্বীন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ficus carica। এই ফলটি দেখতে অনেকটা দেশীয় ডুমুরের মত। কিন্তু তুলনামূলক দেশি ডুমুরের চেয়ে আকারে একটু বড় হয়ে থাকে। এটি সুমিষ্ট এবং অত্যধিক সুস্বাদু এবং রসালো একটি ফল। এককথায় স্বাদে-গন্ধে পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফল হল ত্বীন ফল। বাংলাদেশে বহুল পরিচিত বিদেশী ফল গুলোর মধ্যে খেজুরের পর তিন ফল দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ করা হচ্ছে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে অর্থকরী ফসল হিসেবে উৎপাদন করা হয় ত্বীন ফল। ত্বীন ফল সবচেয়ে বেশি চাষ হয় তুরস্কে।
বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফল চাষ করা হচ্ছে ও এতে সফলতাও লাভ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ফল হওয়ায় আমাদের অনেকের কাছেই এই ফল খুব একটা পরিচিত নয়। তুরস্কে এই ফল খুব ভাল জন্মে, বর্তমানে বাংলাদেশের বগুড়া এবং গাজীপুরে এর চাষ হচ্ছে।
ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়মঃ
ত্বীন ফল বাংলাদেশের সুপরিচিত ফল না হওয়ায় ত্বীন ফল কিভাবে খাবো তা আমরা বুঝে উঠতে পারিনা। তাই কয়েক ভাবে ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম উল্লেখ করছি।
***কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খেতে পারে।
***ভাল মতো শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষন করে শুকনো ত্বীন (dried fig) ফল খেতে পারেন।
***ত্বীন ফলের চামড়া এবং বিচি সহ খাওয়ার উপযোগী।
ত্বীন ফলের উপকারিতা
ত্বীন ফল একটি বিস্ময়কর ফল। পবিত্র কুরআন মাজিদ এবং বাইবেলেও এই ফলের উল্লেখ্য রয়েছে। এটিকে জান্নাতের ফল নামেও ডাকা হয়ে। তাই এই ফল নিয়ে এবং এর উপকারিতা পুষ্টিগুণ জানতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তাই চলুন ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই:
১। মানসিক ও শারীরীক ক্লান্তি দূর করে
২। রক্ত শুন্যতা দূর করে ত্বিন ফল।
৩। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ
৪। ত্বকের উজ্জ্বলতায় কার্যকরী ত্বীন ফল
৫। রক্তে ক্ষতিকর সুগার কমায়
৬। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
৭। শক্তি বৃদ্ধি করে
৮। ত্বীন ফল হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৯। শ্বাস-কষ্ট দূর করতে সহায়তা করে
১০। ক্ষতিকর মেদ ও চর্বি কমায়
ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ:
ত্বীন ফল একটি উপকারী ফল। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক,ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, এসিড, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, কপার, নিয়াসিন ইত্যাদি সহ রয়েছে আরও অনেক খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ইত্যাদি।
##ত্বীন ফল কি কি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে:
আল্লাহর রসুল (সা.) তিন ফল অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার সময় বলতেন, ‘এটি খাও, কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে।
যেমন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, চুলপড়া হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ত্বীন ফল কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিডনি লিভারের কার্যকারিতাও বহুগুণে বৃদ্ধি করে ত্বীন ফল।
গর্ভবতী মহিলাদের এসিডিটি দূর করতে এবং শরীরের দুর্বলতা কমাতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে এই ফল। দুর্বলতা কমিয়ে শক্তি ফিরিয়ে আনতে ত্বীন ফলের জুড়ি নেই।
পাইলস রোগের অসাধারণ ঔষধ হলো ত্বীন ফল।এলার্জি দূর করতেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে এর ভূমিকা অপরিসীম।
প্রোস্টেট এবং জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে ত্বীন ফল। স্নায়ুরোগ কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ত্বীন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন_ডায়েট এবং ফিট থাকতে ত্বীন ফল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। শুধু ত্বীন ফল নয় বরং ত্বীন ফলের পাতা দিয়েও বিশেষভাবে গ্রিন টি তৈরি করে খাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেলে বোঝা যায় এই ফলের কোনো জুড়ি নেই। বহু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতায় ভরপুর এই ফল আমাদের সবার খাওয়া উচিত।
আল্লাহ যে ফলের শপথ করেছেন তা যেনতেন কোনো ফল নয়। অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী তো বটেই। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা ত্বীন ফলের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি এবং ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম জানলাম।
Pingback: খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা || খেজুরের পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ - Agamir Bangla