তথ্য

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ও সংশোধন এর নিয়ম

 দেশ বিদেশে ভ্রমণ করতে ভালোবাসে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তাছাড়া পড়াশোনা, কর্ম, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের বাহিরে যেতে হয়। দেশের মধ্যে খুব সহজে ভ্রমণ করা গেলেও দেশের বাহিরে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো পাসপোর্ট। সাথে প্রয়োজন ভিসা। এই দুটি ডকুমেন্টস ছাড়া বহির্বিশ্বে যাতায়াত অসম্ভব। 

 

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কিভাবে পাসপোর্ট তৈরি করতে হয় এবং পাসপোর্টে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা কিভাবে সংশোধন করা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

 

পাসপোর্ট বানাতে কি কি প্রয়োজনঃ

পাসপোর্ট বানাতে সাধারণত চারটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়ে থাকে –

 

১.বয়সের প্রমাণ হিসেবে যেকোনো ডকুমেন্টস যেমনঃ- জন্ম নিবন্ধন / জাতীয় পরিচয় পত্র / শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট / ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি

 

২. স্হায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানার প্রমান হিসবে যেকোনো কাগজপত্র যেমনঃ- বিদ্যুৎ বিল / গ্যাস বিল / ভূমির খতিয়ান / পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি

 

৩. আপনার ছবি

 

৪. ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুপারিশ পত্র

 

 

 

অফলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদনঃ

 

আগে নরমাল পাসপোর্টের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ব্যাবহার করা হয়৷ ই-পাসপোর্টের আবেদন এখন ঘরে বসে অনলাইনে করা যায় তবে প্রয়োজনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও আবেদন করা যায়৷

প্রথমত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফরম সংগ্রহ করুন। এরপর ফরমটির সকল তথ্য নির্ভূলভাবে পুরণ করে নিন এবং সরকারের নির্ধারিত ফি নির্দিষ্ট মাধ্যমে জমা প্রদান করে রশিদ সংগ্রহ করুন। সর্বশেষ উপরোক্ত সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং আবেদন ফরম ও টাকা জমাদানের রশিদটি একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে অনুমোদন করাবেন৷ তারপর কম্পিউটার এন্ট্রির কাজ শেষ হলে কাউন্টার থেকে রশিদ সংগ্রহ করে নিন। পরবর্তীতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর আপনার পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।

 

 

অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদনঃ

 

আজকাল ডিজিটাল দেশের বদৌলতে সরকারি সকল কার্যক্রম ঘরে বসেই ঘরে বসে করা যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে না থেকে খুব সহজে আপনি ঘরে বসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

নিম্নে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া দেয়া হলোঃ-

 

১. প্রথমে ই-পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট  www.epassport.gov.bd এ প্রবেশ করুন।

 

২. প্রথমে নিজের বিভাগ, দ্বিতীয়তে আপনার সক্রিয় একটি ইমেইল এবং তৃতীয়তে মোবাইল নাম্বার, ভোটার আইডি তথ্য ও একাউন্ট ইনফরমেশন দিয়ে ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে আপনার একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করে নিন। এরপর একাউন্টে লগিন করুন।

বিঃদ্রঃ একাউন্ট তৈরি না করে সরাসরি Directly to Online application অপশনে ক্লিক করে পাসওয়ার্ড আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

 

৩. লগিনের পর Apply for a new passport অপশনে ক্লিক করে আপনার ব্যাক্তিগত সকল তথ্য যেমন নাম, নিকনেইম, প্রফেশন ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন।

 

৪. সকল তথ্য প্রদান করার পর Previous Passport নামের একটি অপশন আসবে। যদি আপনি পুরাতন পাসপোর্ট রিনিও করতে চান তাহলে এই অপশনে ক্লিক করতে পারেন অন্যথায় New Passport অপশনে ক্লিক করুন।

 

৫. এরপর আপনার এড্রেস ও পিতা মাতার তথ্য প্রদান করুন।

 

৬. তথ্য প্রদান করার পর Passport option আসলে কতদিনের জন্য পাসপোর্ট বানাবেন, কয় পেজের বানাবেন ও কত টাকা প্রয়োজন তা দেখে নিতে পারেন এবং পছন্দমতো বাছাই করুন।

বিঃদ্রঃ সময় ও পেইজ ভেদে ফি এর তারতম্য হয়।

 

৭. সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের পেমেন্ট সম্পন্ন করুন ও রশিদ সংগ্রহ করুন।

 

৮. Delivery option এ গিয়ে কিভাবে পাসপোর্ট নিবেন তা সিলেক্ট করুন।

 

৯. সকল ডকুমেন্টস সাবমিট ও পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদানের জন্য পছন্দমতো তারিখ বাছাই করে নিন।

 

১০. সকল তথ্য প্রদানের পর আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে নিন।

 

১১. পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করুন। পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশে আপনার দেয়া সকল তথ্য পুলিশ বাসায় এসে অথবা আপনাকে থানায় ডেকে যাচাই করে দেখতে পারে।

 

পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন তা হলো

 

১. ভোটার আইডি কার্ড

২. স্টুডেন্ট আইডি কার্ড

৩. সার্টিফিকেট

৪. পিতা-মাতার আইডি কার্ড

৫. ইউটিলিটি বিল কপি

৬. স্হায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রমান বা জমির কাগজপত্র

 

এই ছিলো পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া। অত্যন্ত দ্রুত ও সহজ একটি পদ্ধতি হলো এটি। তাছাড়া অফলাইনে আবেদন করতে হলে দালালসহ আরো বিভিন্ন ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় তাই বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করাই শ্রেয়।

 

 

পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার নিয়মঃ

 

আমাদের অজান্তে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ভুল হয়ে থাকে। আমরা অনেকে মনে করি সরকারি কাজে কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ। তবে বর্তমানে ঘরে বসে খুব সহজে এই সমস্যা গুলোর সমাধান করা যায়।

নিম্নে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলোঃ-

 

১. পাসপোর্টের ওয়েবসাইট www.epassport.gov.bd এ প্রবেশ করে পাসপোর্ট সংশোধন ফরমটি ডাউনলোড করে নিন।

 

২. ডাউনলোডকৃত ফরমের সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।

 

৩. সরকার নির্ধারিত সংশোধিত ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে প্রদান করুন এবং জমাদানের রশিদ সংগ্রহ করুন।

 

৪. আবেদন ফরম ও ব্যাংক রশিদ সহেত যে তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে ইচ্ছুক সে সকল তথ্যানুযায়ী সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমানাদি নিয়ে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।

বিঃদ্রঃ ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুনরায় পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে।

 

৪. সর্বশেষ ফরমে যে মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকবে সে নাম্বারে মেসেজ আসলে অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিন।

 

তাছাড়া উল্লেখিত উপায়ে পুরাতন পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেন এবং পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে উক্ত ডকুমেন্টস গুলোর প্রয়োজন হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

 

 

 

 

আর্টিকেলটি ভাল লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে সাথে ফেসবুকে শেয়ার করুন এবং এই ধরনের আরো বিভিন্ন পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি ঘুরে দেখুন