অনুপ্রেরণামূলক ৫টি শিক্ষণীয় ছোট গল্প ও নীতিকথা
আমাদের জীবনে এগিয়ে যেতে আমরা সব সময় চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু বিভিন্ন সময় ব্যার্থতা ,ক্লান্তি, অবসাদ আমাদের নিজেদের লক্ষ্য অর্জন থেকে অন্য পথে পরিচালিত করে। এমন সময় আমাদের প্রয়োজন হয় একটু আনুপ্রেরণা এবং সাহসের যা আমাদের নতুন উদ্যমে কাজে ঝাপিয়ে পরতে সহায়তা করে। আশা করছি আজকের এই পাঁচটি মোটিভেশনাল গল্প এবং নীতিকথা গুলো আপনাকে কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত করবে।
শিক্ষমূলক গল্প ১ – বন্ধু
একবার দুইজন খুব ভাল বন্ধু একসাথে মরুভূমীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তারা পথ চলতে চলতে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিল, কথার এক পর্যায়ে তাদের কোন একটি বিষয়ে ঝগড়া হলো এবং সে ঝগড়ায় ১ম বন্ধুটি ২য় বন্ধুকে একটি চড় মেরে বসলো।
২য় বন্ধুটি কষ্ট পেলো কিন্তু ১ম বন্ধুটিকে কিছুই বললো না , সে বালিতে লিখলো –
“আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু আজ আমায় থাপ্পর মরেছে”
বন্ধু দুটি আবার হাটতে শুরু করলো এবং হাটতে হাটতে একটি মরুদ্যান এর সামনে এসে উপস্থিত হয়। তারা সেখানে পানিতে গোসল করতে মনস্থির করে। এমন সময় যে বন্ধুটি (২য়) চড় খেয়েছিল সে চোরাবালিতে আটকে যায় এবং নিচে ডুবে যেতে শুরু করে। তখন ১ম বন্ধুটি তাকে দ্রুত উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার পর ২য় বন্ধুটি গিয়ে আবার পাথরের উপরে লিখলো-
“আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু আজ আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে”
এটি দেখে ১ম বন্ধটি জিজ্ঞাসা করলো –
কিরে, যখন মারলাম তখন লিখলি বালিতে, আর বাঁচানোর পর লিখলি পাথরে। এর কারন কি?
তখন ২য় বন্ধুটি উত্তর দিল-
“যখন আমাদের কেউ কষ্ট দেয় সেটা বালিতেই লেখা উচিত। যাতে ভালবাসা ও মায়ার বাতাস তা মুছে ফেলে। কিন্তু যখন কেউ আমাদের উপকার করে সেটা পাথরে খোদাই করে রাখতে হয়, যাতে কোন কিছুই সেটা মুছতে না পারে।”
নীতিকথাঃ
নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট বিবাদ হতেই পারে, কিন্তু তা মনে পুষে রাখতে নেই। কারন বড় বিপদ গুলোতে কাছের মানুষ গুলোই এগিয়ে আসে।
শিক্ষামূলক গল্প ২- নিজের মূল্য ভুলে যাবেন না
একবার একজন মোটিভেশনাল স্পিকার একটি সেমিনারে এসে সবার উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য শেষ করলেন । তারপর পকেট থেকে ৫০ ডলারের একটি নোট হাতে নিয়ে বললেন এই নোটটি তিনি এখানে উপস্থিত যে কোন একজনকে দিতে চান।
কেউ নিতে আগ্রহী কিনা জানতে চান। সভা কক্ষের প্রায় সবাই হাত তুলে নিতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো।
এবার তিনি বললেন, একটু অপেক্ষা করুন কিছু কাজ বাকি আছে আমার। এরপর সেই বক্তা নোটটি হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে কুঁচকে ফেললেন।
তারপর জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন, এখনো কি আপনারা নিতে চান?? আগের মতো প্রায় সবাই ই হাত তুললো।
তারপর সে স্পিকারটি নোটটি ফ্লোরে ফেলে তার উপর তার উপর দাঁড়িয়ে নোটটিতে ধুলা লাগালেন । এবার কেউ নিতে চায় কিনা জানতে চাইলে আগের মতোই সবাই নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলো।
তারপর বক্তাটি জানতে চান, নোটটি তো কুচকানো এবং ময়লা তাও আপনারা নিতে আগ্রহী কেন?
তখন জনতা উত্তর দেয় টাকা ময়লা বা কুচকানো হলেও এর দাম কমে যায়না।
তখন স্পিকার বললেন, মানুষের জীবন এর চেয়ে বেশি মূল্যবান।
জীবনে হয়তো ঝড় ঝাপটা, খারাপ সময় আসতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নিজের মুল্য ভুলে গেলে চলবেনা।
নীতিকথাঃ
মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান। এবং সেটি প্রতিটি অবস্থাতেই মূল্যবান।
শিক্ষামূলক গল্প ৩- বাক্স ভর্তী ভালবাসা
কিছুক্ষণ আগে একটি লোক তার ৩ বছর বয়সী মেয়েকে একটি সোনালী র্যাপিং পেপার অপচয় করার জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন। ব্যাবসা মন্দ চলছিল, এমন দুঃসময়ে মেয়েটি ক্রিসমাস ট্রি এর নিচে থাকা বক্স ডেকোরেট করে টাকা অপচয় করছে তাই লোকটি ক্ষেপে গিয়েছিল।
কিন্তু পরের দিন এক্স-মাস ডে এর সকালে যখন ছোট্ট মেয়েটি সেই সাজানো বাক্সটি তার বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো-
“এই উপহারটি তোমার জন্য বাবা”
তখন লোকটি কিছুটা বিব্রতবোধ করলো এবং গতকাল মেয়ে শাস্তি দেয়ার জন্য মনে মনে লজ্জিত হচ্চছিল। কিন্তু বাবা বাক্সটি যখন খুললো তখন সে আগের চেয়েও বেশি রেগে গিয়েছিল। কারন বক্সটি খালি ছিল। এটি দেখে মেয়েটির বাবা রাগান্বিত কন্ঠে মেয়েটিকে বললো –
“তুমি কি এটা জাননো যে, কাউকে উপহার দিলে বাক্সে কিছু একটা থাকতে হয়? খালি বক্স দেয়াটা অসভ্যতা।“
তখন মাথা নিচু করে থাকা বাচ্চা মেয়েটি ছলছল চোখে উপরের দিকে ফিরে কান্না জড়িত কন্ঠে তার বাবাকে বললো-
“ওহ বাবা!
বাক্সটি মোটেই খালি নয়। আমি এটিতে আমার অনেক গুলো ভালবাসা এবং চুমু বন্দী করে তোমাকে দিয়েছি।“
বাবা মেয়ের কথা শুনে কান্নায় ভেংগে পরলো এবং হাটু গেরে বসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইলো।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একটি দুর্ঘটনায় মেয়েটি মারা যায়। তার বাবা সেই সোনালী বাক্সটি তার কাছে সযত্নে রেখে দেয়। যখনই তার মন খারাপ হয় ,হাতাশা ঘিরে ধরে তখনই বাচ্চা মেয়েটির সেই সোনালী বক্সটা হাতে নিয়ে কন্যার সেই ভালবাসা অনুভব করে সব কষ্ট এবং হতাশা ভুলে যায়।
নীতিকথাঃ
নিষ্পাপ ভালবাসার অমূল্য। যেকোন পার্থিব বস্তুর সাথে যার তুলনা চলেনা।
শিক্ষামূলক গল্প ৪- দুশ্চিন্তা ধরে রেখোনা
একদিন একজন শিক্ষক ক্লাসে একটি অর্ধপূর্ন পানির গ্লাস নিয়ে ঢুকলেন। তা দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা ধরে নিলো তিনি সেই পুরোনো “গ্লাসটি কি অর্ধেক পূর্ণ নাকি অর্ধেক খালি?”
নামক বোরিং প্রশ্নটি করবেন।
কিন্তু শিক্ষক সবাইকে অবাক করে দিয়ে জানতে চাইলেন। বলো তো এখানে কতোটুকু ওজনের পানি আছে? শিক্ষার্থীরা ৭ আউন্স থেকে ৩০ আউন্সের মধ্যে জবাব দিল।
তখন শিক্ষক জবাব দিলেন আসলে কতটুকু ওজনের পানি ধরে আছো তা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ না, কতক্ষণ সময় যাবত ধরে আছো সেটাই আসল বিষয়।
যদি তুমি একটি পানির গ্লাস এক মিনিটের জন্য ধরে থাকো তাহলে তোমার কাছে এটি কোন ব্যাপারই মনে হবেনা।
যদি ১০ মিনিট যাবত ধরে থাকো তবে হাতে কিছুটা অসারতা বা ব্যাথা অনুভুত হতে পারে। সেই একই গ্লাস যদি সারা দিনের জন্য ধরে রাখতে হয় তবে তোমার সেই সামান্য ওজনের গ্লাসেই অস্বস্থিকর ব্যাথা হবে।
ঠিক তেমনই তুমি যখন কোন মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা শুরু করো যদি সেটা অল্প কিছুক্ষণ ভেবে বাদ দাও তবে সেটা তেমন ক্ষতির কিছুনা।
কিন্তু তুমি যদি সেটি নিয়ে দিন পার করে দাও এবং ভাবতেই থাকো তাহলে তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে সেটা থেকে আরো দুশ্চিন্তা এবং আপ্রয়োজনীয় চিন্তার ডাল পালা গজায়।
আর তুমি যদি এই ওভার থিংকিং নিয়ে ঘুমাতে যাও এবং এটি নিয়েই জেগে উঠো তবে এর চেয়ে খারাপ আর কিছুই হতে পারেনা।
গল্পের শিক্ষানীয় উক্তিঃ
আমাদের দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত না। যদি সে বেপারে আমাদের হাতে করার কিছু থেকে থাকে তবে তা করা উচিত, আর না থাকলে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে দেয়া উচিত।
শিক্ষামূলক গল্প ৫- কুড়ালের ধার (কর্মদক্ষতা)
একদা রাজা বনে কাঠ কাটার জন্য কয়েকজন কুঠার নিয়োগ দিতে চাইলেন।
সবার মধ্যে একজন কুঠার খুব দ্রুততম সময়ে অন্যের দের তুলনায় বেশি কাঠ কেটে দেখালো,
তাতে রাজা অনেক খুশি হয়ে তাকে প্রধান কুঠার নিয়োগ করলেন এবং পুরষ্কৃত করলেন। সে এতে আরোবেশি অনুপ্রাণিত হয়ে আরো বেশি পরিশ্রম করে কাজ করতে লাগলো। সে প্রথম মাসে ১৮টি গাছ কাটলো রাজা খুবই খুশি হলেন।
সে দ্বিত্বীয় মাসে কাটলো ১৫টি এবং তৃত্বীয় মাসে কাটলো ১২টি গাছ। রাজা যখন ৩ মাস পর ঘুরতে এসে তার এই নিন্মমুখী ফলাফল দেখতে পেলেন তখন তিনি কিছুটা অবাক হলেন। যেহেতু কাঠুরের সক্ষমতা, পরিশ্রম এবং সততা নিয়ে রাজার কোন সন্দেহ ছিলনা।
তাই তিনি কাঠুরের কাছে এর কারন জানতে চাইলেন। কাঠুরে বললো, “মহামান্য রাজা, আমি আমার সাধ্যের কোন ত্রুটি করছিনা, তবুও কাজ কম হচ্ছে। হয়তো আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।” রাজা বললেন আচ্ছা তোমার কুড়ালটি নিয়ে এসো।
রাজা কুড়ালটি দেখলেন এবং কাঠুরেকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “এই মাসে শেষ কবে কুড়ালটি তে ধার দিয়েছিলে বলো তো” কাঠুরে যে জবাব দিলো তাতে রাজা অবাক হয়ে গেলো।
কাঠুরে বললো সে “হুজুর প্রতিদিন বেশি থেকে বেশি কাঠ কাটার জন্য গত তিন মাসে কুড়াল ধার দেয়ার পিছনে সময় দিতে পারিনি”
এখন রাজা এবং কাঠুরে দুই জনই গাছ কাটার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারন বুঝতে পারলো।
নীতিকথাঃ
জীবনে কাজের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রামও জরুরী এতে নতুন উদ্যমে কাজ করা যায় এবং কর্মদক্ষতা বাড়ে।
শেষকথাঃ
মানুষের জীবন, চিন্তা ধারা পরিবর্তন করতে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আশাকরি এই ছোট গল্প গুলো আপনাদের ভাল লেগেছে। গল্প গুলোর সারসংক্ষেপ ও তালিকা আবার নিচে দিয়ে দিচ্ছি। আরো মোটিভেশনাল স্টোরি পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ ঘুরে দেখতে পারেন। গ্রুপের লিংক নিচে (G+) আইকনে ক্লিক করলে পাবেন।
গল্পের তালিকাঃ
|
|
|
|
|
Pingback: সেরা ১০ বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি। অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প – Agamir Bangla